Headlines
Loading...
Sura At-Tin Bangla | সূরা আত-ত্বীন আরবি বাংলা উচ্চারণ

Sura At-Tin Bangla | সূরা আত-ত্বীন আরবি বাংলা উচ্চারণ

সূরা আত-ত্বীন পবিত্র কুরআন শরীফের ৯৫ তম সূরা। এই সুরা’র আয়াত সংখ্যা ৮ এবং সূরাটি মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। ত্বীন শব্দের অর্থ হল “ডুমুর”। এই সূরাটিতে আল্লাহ এক বিশেষ পুরুস্কারের কথা বলেছেন যা শুধু বিশ্বাসী এবং সৎকর্মকারীরা লাভ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান ও সৎকর্মশীল হওয়ার উপর এ  সূরাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
Bismillah hir rahman nir raheem
In the name of Allah, the Entirely Merciful, the Especially Merciful.

وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ
Wat teeni waz zaitoon
উচ্চারণঃ ওয়াততীন ওয়াঝঝাইতূন।
অর্থঃ শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,
By the fig and the olive

وَطُورِ سِينِينَ
Wa toori sineen
উচ্চারণঃ ওয়া তূরি ছীনীন।
অর্থঃ এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
And [by] Mount Sinai

وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ
Wa haazal balad-il ameen
উচ্চারণঃ ওয়া হা-যাল বালাদিল আমীন।
অর্থঃ এবং এই নিরাপদ নগরীর।
And [by] this secure city [Makkah],

لَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ فِيٓ أَحۡسَنِ تَقۡوِيمٖ
Laqad khalaqnal insaana fee ahsani taqweem
উচ্চারণঃ লাক্বদ খলাকনাল ইং-ছা-না ফী-আহছানি তাক্বয়্যুইম।
অর্থঃ আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
We have certainly created man in the best of stature;

ثُمَّ رَدَدۡنَٰهُ أَسۡفَلَ سَٰفِلِينَ
Thumma ra dad naahu asfala saafileen
উচ্চারণঃ ছু ম্মা রাদাদ না-হু আছফালা ছা-ফিলীন।
অর্থঃ অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে।
Then We return him to the lowest of the low,

إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَٰتِ فَلَهُمۡ أَجۡرٌ غَيۡرُ مَمۡنُونٖ
Ill-lal lazeena aamanoo wa ‘amilus saalihaati; falahum ajrun ghairu mamnoon
উচ্চারণঃ ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূওয়া’আমিলুসসা-লিহা-তি ফালাহুম আজরুন গাইরু মামনূন।
অর্থঃ কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
Except for those who believe and do righteous deeds, for they will have a reward uninterrupted.

فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعۡدُ بِٱلدِّينِ
Fama yu kaz zibuka b’adu bid deen
উচ্চারণঃ ফামা-ইউকাযযি বুকা বা‘দুবিদ্দীন।
অর্থঃ অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে?
So what yet causes you to deny the Recompense?

أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِأَحۡكَمِ ٱلۡحَٰكِمِينَ
Alai sal laahu bi-ahkamil haakimeen
উচ্চারণঃ আলাইছাল্লা-হু বিআহকামিল হা-কিমীন।
অর্থঃ আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্টতম বিচারক নন?
Is not Allah the most just of judges?

সূরা আত-ত্বীন-এর আলোচ্য বিষযঃ

আলোচ্য সূরা ত্বীনে কয়েকটি জিনিসের শপথ করে মানব সৃষ্টির সূচনা এবং পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সৎ কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং বিচারকার্যে ন্যায়-ইনসাফ বজায় রাখার শিক্ষা বিবৃত হয়েছে।

সূরা আত-ত্বীন-এর শানে নযুলঃ

ইবনে জারীর তাবারী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ স.-এর যুগে একদল বয়োবৃদ্ধ মানুষ ছিল । যারা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দীর্ঘ হায়াত লাভ করেছে। ফলে তাদের হীতাহিত জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা লোপ পেয়েছে। এ সকল লোকের সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে আলোচ্য সূরাটি অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয়েছে যে, তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার পূর্বে যেসব সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে তার বিনিময়ে তারা পুরস্কৃত হবে।

সূরা ত্বীন এর তাফসীর

আয়াত ১ থেকে ৪ঃ
আল্লাহ তা’আলা এ সূরায় চারটি বস্তুর শপথ করেছেন-
এক] التَيْنِ (ত্বীন) ডুমুর বৃক্ষ বা ফল।
দুই] الزَّيْتُونِ (যয়তুন) জলপাই (olive) বৃক্ষ বা ফল।
তিন] وَطُورِ سِينِينَ (তুরে সিনীন) সিনাই পর্বত।
চার] الْبَلَدِ الْأَمِينِ (বালাদুল আমীন) নিরাপদ শহর-মক্কা।

এই চারটি বস্তুর শপথের বিশেষ কারণ, চারটি বস্তু অতি উপকারী। আর এতে নির্দেশনা রয়েছে যে, মানুষকেও উপকারী হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। যে উপকারী হিসেবে নিজেকে। প্রমাণ করতে পারবে, সে-ই সত্যিকার মানুষ হিসেবে প্রমাণিত হবে।

তাফসীর বিশারদগণ আরো একটি রহস্য বলেছেন, এখানে ত্বীন ও যয়তুন উল্লেখ করে সে স্থানকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে এই বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম (সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন ও বাহরাইন), যা অগণিত পয়গম্বরের আবাসভূমি। অতএব ত্বীন এবং যয়তুনের শপথ করার মাধ্যমে সেসব ভূমি অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, যেখানে বিশেষ বিশেষ পয়গম্বর প্রেরিত হয়েছেন। তুর পর্বত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর সাথে কথা বলার স্থান এবং নিরাপদ শহর, শেষ নবী (সাঃ)-এর জন্মস্থান।

চারটি বস্তুর শপথ করে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ সুন্দরতম অবয়বে। أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ -এর উদ্দেশ্য হলো, তার মজ্জা এবং স্বভাবকেও অন্যান্য সৃষ্ট জীবের তুলনায় উত্তম করা হয়েছে। তার দৈহিক অবয়ব এবং আকার-আকৃতিতেও দুনিয়ার সব প্রাণী অপেক্ষা সুন্দরতম করা হয়েছে।

সৃষ্টজগতের সর্বাধিক সুন্দর হলো মানুষ। মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর করেছেন। ইবনে আরাবী বলেন, আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে মানুষ অপেক্ষা সুন্দর কিছুই নেই । কেননা আল্লাহ তা’আলা মানুষকে জ্ঞানী, শক্তিবান, বক্তা, শ্রোতা, দ্রষ্টা, কুশলী ও প্রজ্ঞাবান করেছেন।

আয়াত ৫ঃ

পূর্বের আয়াতে মানুষ সমগ্র সৃষ্টির সুন্দরতম এই বর্ণনা ছিল। ثُمَّ رَدَدْنَهُ أَسْفَلَ سَفِلِينَ এ আয়াতে তার বিপরীতে বলা হয়েছে যে, সে যৌবনের প্রারম্ভে যেমন সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর ও শ্রেষ্ট ছিল, তেমনি পরিশেষে সে নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর এবং মন্দ থেকে মন্দতর হয়ে যায়।

বলাবাহুল্য, এই উৎকৃষ্টতা ও নিকৃষ্টতা তার বাহ্যিক ও শারীরিক দিক দিয়ে বলা হয়েছে । যৌবন অস্তমিত হয়ে গেলে তার আকার-আকৃতি বদলে যায়। বার্ধক্য এসে তাকে সম্পূর্ণ অকর্ম করে দেয়। কর্মক্ষমতা হারিয়ে অন্যের ওপর বোঝা হয়ে যায়। অন্যান্য জীবজন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে ৷ জবাই করে খাওয়া যায়। মারা গেলেও চামড়া, পশম, অস্থি মানুষের কাজে আসে।

আয়াত ৬ঃ

তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে তাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার রয়েছে। পূর্বের আয়াতে বৃদ্ধদের শোচনীয় অবস্থা বর্ণিত হওয়ার দ্বারা কারো মনে এ ধারণা জন্ম হতে পারে যে, হয়তো এ সকল বৃদ্ধ আখিরাতেও শক্তিহীন কদাকার, শোচনীয় অবস্থায় থাকবে। তাদের এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইহকালীন জীবনে বার্ধক্যের কারণে বাহ্যিক খারাপ হলেও যারা বিশ্বাসী ও সৎ কর্ম বাস্তবায়ন করেছে আখিরাতে তাদের অবস্থা অত্যন্ত প্রশংসনীয় হবে, তারা বিরাট পুরস্কারে সম্মানিত হবে।

فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ তাদের পুরস্কার কখনো বিচ্ছিন্ন ও কর্তিত হবে না। কোনো কোনো তাফসীর বিশারদ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি বার্ধক্যজনিত বেকারত্ব ও কর্ম হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও তাদের আমলনামায় সেসব কর্ম লিখিত হয়, যা তারা শক্তিমান অবস্থায় করত । সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

اذا مرض العبدا وسافر کتب لہ مثل ما كان يعمل مقيما صحيحا ‘কোনো বান্দা অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা সফর অবস্থায় থাকলে সুস্থ এবং মুকিম অবস্থায় সে ব্যক্তি যেসব সৎ কর্ম করত, সেগুলো তার আমলনামায় লেখা হয়।’ (সহীহ বুখারী-৬০২১ সহীহ মুসলিম-১০০৫)

আয়াত ৭ঃ

সুতরাং হে অবিশ্বাসী সম্প্রদায়! আল্লাহ যেহেতু নতুন সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং সৃষ্টির অবস্থা পরিবর্তন করতেও সক্ষম, তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সৃষ্টি করতে সক্ষম, তাহলে তোমাদেরকে কোন জিনিস আল্লাহর দ্বীন ও কর্মফল-পুরস্কার বিষয়ে অস্বীকারকারী বানায়? খোদায়ী শক্তির উপরোক্ত দৃশ্য ও পরিবর্তন দেখার পরও তোমাদের জন্য পরকাল ও কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করার কি অবকাশ থাকতে পারে?

আয়াত ৮ঃ

আল্লাহ কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন? যখন কোনো শাসক রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে যথাযোগ্য কর্মকর্তাদের যথোচিত পুরস্কারে ভূষিত করে, শাসকগণ যখন নিজেদের অনুগত ও দলীয় লোকদের নানাভাবে পুরস্কৃত করে এবং অপরাধী ও বিদ্রোহীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করে, তাহলে ওই আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক, মহাবিশ্বের অধিপতি তিনি কি যোগ্যদের যথাযথ সম্মান প্রদান করবেন না? তিনি কি অপরাধী, অবিশ্বাসীদের কঠিন শাস্তি দেবেন না? অবশ্যই, প্রত্যেক বান্দাকে তার কর্মফল অনুযায়ী আল্লাহ বিচারকার্য সম্পাদন করবেন।

১] ‘ত্বীন’ ও ‘যয়তুন’ তথা ডুমুর ও জলপাইয়ের উপকারিতা এবং মানবদেহের জন্য এগুলোতে আরোগ্য রয়েছে, সে বিষয়টি ফুটে উঠেছে। প্রতিটি মানুষ কর্মক্ষেত্রে উপকারী হওয়ার শিক্ষা নিতে পারে। সাথে সাথে এই ফলের মতো মানুষের উন্নতি ও অবনতি অবধারিত।

২] পবিত্র ভূমি মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী হারামের সীমানা আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাপূর্ণ, তা বর্ণিত হয়েছে। এভাবে যে মানুষ আল্লাহ তা’আলার সাথে সম্পৃক্ত হবে, সেও মর্যাদাশীল হতে পারবে।

৩] আল্লাহর সকল সৃষ্টির মাঝে একমাত্র মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সবচেয়ে বেশি, তা প্রমাণিত হয়েছে এবং আল্লাহ মানুষকে অন্য সকল কিছু থেকে উত্তম অবয়বে অপরূপ সৌন্দর্যে সৃষ্টি করেছেন, তা বিবৃত হয়েছে।

৪] যে সকল বিশ্বাসী মুসলিম যৌবনে সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে এবং দীর্ঘ হায়াত লাভের মাধ্যমে বার্ধক্যে উপনিত হয়েছেন তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব আলোচিত হয়েছে। পূর্বে তাঁরা যে আমল করেছেন তার পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবেন বলে আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন।

সামগ্রিকভাবে, সূরা আত-তিন একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু শক্তিশালী অধ্যায় যা বিশ্বাস, নৈতিকতা এবং মানুষের কর্মের ফলাফলের মৌলিক দিকগুলিকে সম্বোধন করে। এর আয়াতগুলি বিশ্বাসীদেরকে তাদের আচরণের প্রতি চিন্তা করতে এবং তাদের জীবনে ধার্মিকতার জন্য প্রচেষ্টা করতে উৎসাহিত করে।

সূরা আত-ত্বীন পাঠের ফজিলতঃ

সূরা আত-ত্বীন ১০০ বার পাঠ করলে আল্লাহর বরকতে হারানো বা নিখোঁজ জিনিস ফিরে পাওয়া যায়।
যদি কেউ তার শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায় তাহলে সে যেন এশার নামাযের পর টানা ২১ দিন সূরা আত-ত্বীন ৪১ বার তেলাওয়াত করে। ইনশাআল্লাহ তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরী হবে।

0 Comments: