নামাজ কেমন হওয়া উচিত? | How To Perform Namaz?
নামাজ পড়ার আগে নামাজের পূর্ব প্রস্তুতি থাকা দরকার। যেমন মেসওয়াক করা, অযু করা, পরিস্কার এবং পবিত্র পোষাক পরিধাণ করা, নামাজের জায়গা পরিস্কার এবং পাক থাকা। মোট কথা নামাজের বাইরে সাতটি ফরজ এবং নামাজের ভেতরে ছয়টি ফরজ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা উচিত।
আপনি যখন নামাজের প্রস্তুতি নিবেন তখন পারতপক্ষে দুনিয়াবী বিষয়গুলো ভূলে থাকার চেষ্টা করবেন। যখন নামাজ পাঠের উদ্দেশ্যে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যাবেন তখন মনে মনে এটি বলুন যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার সাথে কাউকে শরীক করি না। তুমি এক। আমি তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য কামনা করি। যখন জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যাবেন তখন ভাববেন আল্লাহ তা’আলা আপনাকে দেখছেন অথবা আল্লাহ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। নামাজে পঠিত সুরাগুলি যেহেতু সম্পুর্ণ আরবী ভাষায় পড়া হয় তাই এর বাংলা অর্থ মনে মনে ভাবতে থাকলে নামাজে পূর্ণ মনোযোগ থাকবে।
যারা সবেমাত্র নামাজ শুরু করেছেন তাদের হয়তো প্রথম প্রথম নামাজে কিছুটা এলোমেলো হতে পারে। কিন্তু কিছুদিন নিয়ম মাফিক নামাজ পড়তে থাকুন আর যেসব স্থানে আপনার ভূল হচ্ছে সেগুলো এক এক করে ঠিক করে নিন। খোদা বড়ই মেহেরবান। নামাজের প্রতি আপনার চেষ্টা এবং একাগ্রতার কারণে আপনার প্রথম পর্যায়ের ভূলগুলো ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। তবে আপনার ভুলগুলো অবশ্যই শুধরে নিতে হবে।
দেখুন, ইবলিশ যাকে আমরা শয়তান বলে জানি সে কখনো চাইবে না যে আমরা আল্লাহর পথে চলি। তাই সে তার সর্বোশক্তি দিয়ে আপনাকে বিমুখ করতে চাইবে। আপনি যখন নামাজ পড়বেন তখন খুবই স্বাাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন। নিয়ত বাঁধার পর ঘন ঘন শরীরের কোথাও চুলকা চুলকি করবেন না। বেশীর ভাগ মানুষই এমনটি করে থাকে। নামাজে অমনোযোগী হবার এটাও একটি কারণ। সর্বদাই মনে রাখবেন যখন নামাজ পড়বেন সেই সময়টুকু একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য। তাই নামাজে পূর্ণ মনোযোগী থাকার সর্বোচ্চ চেষ্ট করবেন।
আপনি যখন নামাজ পড়বেন তখন ভেবে নিবেন যে এটাই হয়তো আপনার জীবনের শেষ নামাজ। আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করে নামাজ আদায় করেন তবে আপনার মনোযোগ নামাজের বাইরে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকার কথা নয়। মনে আল্লাহ ভীতি নিয়ে নামাজ আদায় করলে সেই নামাজে শান্তি আসবে এটা নিশ্চিত। নামাজে তৃপ্তি না আসার একটি বিশেষ কারণ হলো বেখেয়ালী থাকা বা বেখেয়ালী হওয়া। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে নামাজের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে বেশী বেখেয়ালী হয়ে থাকে। আর শয়তান এখানে মূল ভুমিকা পালন করো থাকে। আপনি যখন সত্য পথে চলার পরিকল্পনা করেন তখন শয়তান ভীষণ কষ্ট পায় আর তাই সে আপনাকে সৎ পথে না চলার জন্য তথা আপনাকে গুমরাহি করার জন্য আপনার মনে নানা রকম কুচিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। বিশেষতঃ নামাজকালীন সময়ে শয়তান খুব বেশী একটিভ থাকে যাতে করে আপনি অমনোযোগী হয়ে পড়েন। তাই নামাজের পূর্ব থেকেই বাজে খেয়াল থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
একজন নামাজী ব্যক্তিকে সর্বদাই নামাজের গুণগত মানের দিকে তথা নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের প্রতি লক্ষ্য রাখা অর্থ্যাৎ নামাজের সানা, রুকু, সিজদা,তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাছুরা পাঠের সময় পর্যাপ্ত সময় নেয়া উচিত। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নামাজ হচ্ছে জামাতের সাথে এবং ওয়াক্তের শুরু অর্থাৎ আউয়াল ওয়াক্তের নামাজ । নামাজ সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় কর, যে ভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখ”। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে যে হায়াৎ দান করেছিলেন মৃত্যু পরবর্তী জীবনে আপনাকে তার হিসাব দিতে হবে। আপনি নামাজে যে সময়টুকু ব্যয় করবেন সেটাই হবে সর্বোত্তম সময়। তাই নামাজে কখনই তাড়াহুড়ো করবেন না। মসজিদে কিংবা বাসায় যখন নামাজ পড়বেন তখন পর্যাপ্ত সময় নিয়ে নামাজ আদায় করুন। একমাত্র নামাজ এবং আপনার ভালো আমলগুলোই কাল কিয়ামত দিবসে আপনার নাজাতের কারণ হবে।
নামাজের পোশাক কেমন হওয়া উচিত
একজন নামাজী ব্যক্তিকে তার পোষাকের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। নামাজী ব্যক্তির পোষাক কোনভাবেই আঁটসাঁট হওয়া উচিত নয় অর্থ্যাৎ টাইট-ফিট প্যান্ট ও শার্ট এবং শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা কাপড় পড়ে নামাজ পড়া উচিত নয়। টাইট হওয়ার কারণে নামাজে একাগ্রতা ভঙ্গ হয়। তাছাড়া কাপড়ের উপর থেকে (বিশেষ করে পিছন থেকে) লজ্জাস্থানের উঁচু-নীচু অংশ ও আকার বোঝা যায়। অনেকে এভাবে নামাজ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন। মুমিন মুসলমানের উচিৎ উত্তম পোশাকে নামাজ পড়া। হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে আমল করা। নামাজের পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন পোশাকের বিষয়ে সতর্ক থাকা।
বেশীরভাগ মহিলারাই শাড়ি পড়ে নামাজ পড়েন। কিন্তু শাড়ি পড়ে নামাজ আদায় করলে পর্দা লংঘন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেহেতু পর্দা নামাজের মতোই ফরজ তাই নামাজের আগে পর্দা ঠিক রেখেই নামাজ আদায় করা জরুরি। মহিলারা যদি অন্ধকার ঘরে একাও নামাজ আদায় করে তবুও নামাজের সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। নারীদের নামাজে শুধু মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া আর সবকিছু ঢেকে রাখার নির্দেশনা রয়েছে।
- যদি কপালের কাছে কিছু চুল বেরিয়ে যায়
- কান একটা বা দুটো বেরিয়ে যায়
- কানের পাশে ঝুলফির চুল বেরিয়ে যায়
- পেছনের চুল বেরিয়ে যায়
- থুতনির নিচে গলার কাছে কোনো অংশ বেরিয়ে যায়
- হাতের কাছে কিছু অংশ বেরিয়ে যায়
- পেট বা পিঠের কাছে কিছু অংশ বেরিয়ে যায়।
নারীদের ফরজ ও সুন্নাত পোশাক হলো- যা গলা থেকে শুরু করে পায়ের গোড়ালির নিচু বা পাতা পর্যন্ত ঝুলে থাকবে। আর মাথায় এমন হিজাব বা ওড়না পরিধান করতে হবে যাতে কোনোভাবেই গলা, ঘাড়, কান, মাথা ও ঝুলপির চুল কিংবা বুকের কোনো অংশ তথা চামড়া দেখা না যায়। স্বামীর সামনে ছাড়া অন্য সব জায়গায় সর্বাবস্থায় এ পোশাকগুলো পরিধান করে শরীর ঢেকে রাখা নারীর জন্য ফরজ।
প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর -আল্লাহু আকবার ১ বার, আস্তাগফিরুল্লাহ ৩ বার এবং আয়াতুল কুরসী ১ বার পাঠ করুন। নিয়মিত এই অভ্যাস আপনার নাজাত জীবন তথা জান্নাতের পথ নিশ্চিত করবে। এরপর, কয়েকবার দরুদ শরীফ পাঠ করুন, ৩ বার সুরা ইখলাস এবং পুনরায় কয়েকবার দরুদ শরীফ দরুদ শরীফ এবং ইসমে আজম পাঠ করে মুনাজাত করুন। এইরুপ আমল আপনার প্রতিটি দোয়া কবুলের জন্য যথেষ্ঠ সহায়ক হবে।
নামাজের গুরুত্ব
প্রতিদিন কমপক্ষে একবার হলেও জাহান্নামের কথা এবং এখানে যে সব শাস্তি দেওয়া হবে তার কথাগুলো ভাবুন। আবার এটাও ভাবুন যে আপনি ভালো কাজ করলে এবং নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করলে চিরশান্তির জান্নাত পেতে পারেন। আপনার মাঝে এমন ভাবনা তৈরী হলে আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন আপনার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ভালো কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ দিন দিন বাড়তে থাকবে এবং আপনি প্রতি নিয়ত নামাজের তৃপ্তি পেতে শুরু করেছেন। সব সময়ই হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন এবং হালাল খাবার ভক্ষণ করুন। উচ্চ পর্যায়ের সমস্ত রকম অন্যায় তথা সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, কারো গীবত করা, কাউকে বিপদে ফেলানোর চেষ্টা করা, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া বা অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকুন আর যতটা সম্ভব ইস্তেগফার করুন।
সালাত বা নামায এমন একটি ফরয ইবাদত যার কোনো বিকল্প নেই। একজন সুস্থ মানুষের জন্য নামাজের কোন মাফ নেই। নামাজী ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে অসমর্থ হলে বসে, শুয়ে কিংবা ইশারায় নামাজ আদায় করতে পারবেন তবুও নামাজের কোন মাফ নেই। পবিত্র কোরআনে নামাজ এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে ৮২ বার বলা হয়েছে। পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার একমাত্র পথ হলো নিয়মিত এবং সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। মুমিন ও কাফিরের মধ্যে মাপকাঠি হলো সালাত বা নামাজ। পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব।
জামাতে নামায ত্যাগ করা যেমন ভয়ঙ্কর অপরাধ ও গোনাহের কাজ, তেমনি জামাতে নামায আদায় অপরিসীম সওয়াব ও বরকতের কাজ। ইবনু উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নামায ত্যাগ করলে মানুষ কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاةِ
“একজন মানুষ ও কুফরী-শিরকের মধ্যে রয়েছে নামায ত্যাগ করা।”
কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার আলোকে একথা নিশ্চিত যে, নামায মূসলিমের মূল পরিচয়। নামায ছাড়া মুসলিমের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। নামায পরিত্যাগকারী কখনোই মুসলিম বলে গণ্য হতে পারেন না। দয়াময় আল্লাহ আমার প্রতি আপনার প্রতি সদয় হোন। আমীন। সুম্মা আমীন।
0 Comments: