দোয়া কবুল হয় না কেন? Why the prayers are not answered?
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার প্রতি বড়ই মেহেরবান। আপনি আপনার সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসেন তার চাইতে ৭০ গুণ বেশী ভালোবাসেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। তাই আপনি যখন আর গুনাহ করবেন না বলে আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেন তখন আল্লাহ তাআলা আপনার উপর খুশী হন আর আপনার দোয়া কবুল করে থাকেন। গুনাহ মুক্ত হবার জন্য নিয়মিত তওবা করুন। যদি সম্ভব হয় প্রতি ওয়াক্তের নামাজের শেষে কমপক্ষে ১০০ বার করে ইস্তিগফার পাঠ করুন। এতে করে আপনার আমলনামা থেকে গুনাহ সমুহ কাটা হতে থাকবে আর আপনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা সমুহের কাতারে অন্তর্ভূক্ত হতে থাকবেন। ফেরেশতাদের একটি দল ফজর নামাজের শেষে এবং একটি দল মাগরিব নামাজের শেষে বান্দার আমলনামা নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হন। আল্লাহ তাআলা যখন বান্দার আমলনামায় সকালে এবং সন্ধ্যায় ইস্তিগফারের আমল দেখতে পান তখন খুশি হয়ে দিনের মধ্যবর্তি সময়ে যদি বান্দা কোন গুনাহ করে থাকে তবে তা মাফ করে দেন।
নিয়মিত ইস্তিগফারের সাথে সাথে দরুদ শরীফ পাঠ করুন। কারণ আপনি যখন একবার দরুদ শরীফ পাঠ করেন তখন খোদা তাআলা আপনার মর্যাদা ১০গুণ বাড়িয়ে দেন, ১০টি গুনাহ মাফ করে দেন আর আপনার প্রতি ১০টি রহমত প্রেরণ করে থাকেন আর ফেরেশতাগণ আপনার মাগফিরাতের জন্য অনবরত দোয়া করতে থাকেন। আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন ফজর নামাজের শেষে ১০ বার এবং মাগরিব নামাজের শেষে ১০ বার করে দরুদ শরীফ পাঠ করেন তাহলে কাল কিয়ামতের দিন আপনি আল্লাহর রহমতে বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন।
প্রতিটি জীবের নিশ্চিত মৃত্যু হবে। আপনি কিংবা আমি যখন পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি তখন মৃত্যু আমাদের জন্য অবধারিত। মৃত্যুর সময় কালেমা নসীব হওয়া বা ঈমানের হালতে মৃত্যু বরণ করা সবার ভাগ্যে জোটে না। মৃত্যুর যন্ত্রণা অনেক কঠিণ এবং ভয়ানক। হাদীসে এসেছে, যখন একজন ব্যক্তির কাছে মৃত্যুর ফেরেশতা মালাকুল মাউত চলে আসে ঠিক তখন ঐ ব্যক্তিকে ঈমান হারা করতে শয়তানদের একটা দল চলে আসে। শয়তানরা বলতে থাকে আল্লাহ বলে কিছু নেই। একদিকে মৃত্যুর যন্ত্রণা, অন্যদিকে শয়তানের কুমন্ত্রণা এর মাঝে ঈমান ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিণ। যদি কোন ব্যক্তি এই নিয়ত করে যে, হে আল্লাহ! আমি প্রতিদিন ১০০০ বার দরুদ শরীফের আমল করবো আর এর বিনিময়ে তুমি আমাকে ঈমানের হালতে মৃত্যু দিও। তবে আশা করা যায় দয়াময় আল্লাহ আমাদের সকলের নসীবে ঈমান অবস্থায় মৃত্যু দিবেন। শুধু তাই নয়, আমার আপনার এই নিয়তের কারণে দুনিয়াতে এবং আখিরাতে দয়াময় আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় কল্যাণ দান করবেন।
দোয়া কবুল হয় না কেন?
আপনি যদি খোদার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী না হন এবং একনিষ্ট মনের পরিবর্তে উদাস মনে দোয়া করেন তবে আপনার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ উদাস মনের কোন দোয়াই আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। তিরমিজি শরীফ, হাদীস নং ৩৪৭৯। আত্বীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর দোয়াও আল্লাহ কবুল করেন না।
যারা কোন কিছু না পেলে সহজেই নিরাশ হয়ে যায়, সৎ কাজের আদেশ দেয় না এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করে না তাদের দোয়াও কবুল হয় না। একটি সত্য কথা জেনে রাখুন আর সেটা হলো, মোমিন ব্যক্তির কোন দোয়াই বৃথা যায় না। আল্লাহ তাআলা প্রকৃত বিচারক। বান্দার প্রতিটি দোয়াই আল্লাহ তাআলা কবুল করে থাকেন। আপনার কিছু দোয়া আল্লাহ তাআলা সাথে সাথেই কবুল করে থাকেন এবং আপনি যা কিছু চেয়েছেন তা দিয়ে দেন। কিছু দোয়ার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা আপনার বিপদ-আপদ দূর করে দেন। আবার কিছু দোয়ার বিনিময় আল্লাহ তাআলা আপনাকে আখিরাতে দিবেন। তাই কোন অবস্থাতেই নিরাশ হবেন না।
দোয়ার শক্তি অনেক। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্যকেও পরিবর্তন করা যায়। যখনই দোয়া করবেন, কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবেন। সুর্যাস্তের আগের মুহুর্তে দোয়া কবুলের সম্ভবনা অধিক। এছাড়াও শুক্রবারের দিন আসরের নামাজের পর হতে মাগরিব নামাজের আযানের পূর্ব মুহুর্তে যে কোন সময় দোয়া কবুলের সম্ভাবনা শতভাগ। আর একটি কথা, আপনার প্রতিটি দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল করাতে চাইলে মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করুন। মাঝে মধ্যে আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে রোযা রাখুন। কারণ রোযাদার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা দ্রুত কবুল করে থাকেন।
দোয়া কবুলের আদব ও নিয়মঃ
দোয়া দ্রুত কবুল হওয়ার জন্য কিছু নিয়ম পালন করা উচিৎ। প্রতিটি দোয়ার শুরুতে এবং শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করা উত্তম এবং দোয়ার মধ্যে ইসমে আজম পাঠ করলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা শতভাগ বেড়ে যায়। কখনো কারো জন্য অমঙ্গল চেয়ে দোয়া করবেন না। আর শুধু নিজের জন্য দোয়া করবেন না। সারা পৃথিবীর সমস্থ মাখলুকাতের জন্য দোয়া করবেন। যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন তাদের সকলের গুনাহ মাফের জন্য আর যারা বেঁচে আছেন তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে পাপ মুক্ত হয়ে প্রকৃত মোমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
0 Comments: