Headlines
Loading...
পাহাড় সমান ঋণ মুক্তির দোয়া | Rin Muktir Dua

পাহাড় সমান ঋণ মুক্তির দোয়া | Rin Muktir Dua

দুনিয়াতে চলার জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে। মানুষের জীবনে এমনও সময় আসে যখন তাকে কারো কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হতে হয়। যদিও ঋণগ্রহিতা চান খুব দ্রুত ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে। কখনও কখনও এমনও হয় যে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি তার ঋণ শোধ করতে পারে না কিংবা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় হারাম পথে পা বাড়ায়।

এমনি ঋণের বোঝায় জর্জরিত এক ব্যক্তি একদিন নবী করিম (সাঃ) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ঋণগ্রস্থ এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। এ অবস্থায় আমার পরিত্রাণের কোন উপায় আছে কি? তখন নবী করিম (সাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি কালাম শিক্ষা দিবো যখন তুমি তা পড়বে, আল্লাহ তাআলা তোমার পেরেশানি, দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন এবং তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তখন ঐ ব্যক্তি বললো, হে রাসুল! আপনি আমাকে তা বলে দিন। তখন নবী করিম (সাঃ) বললেন, তুমি প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় বলো— 

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আ’উযুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসলি, ওয়া আ’উযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আ’উযুবিকা মিনগলবাতিদ দ্বাইনি ওয়া কাহরির রিজাল”। সুনানী আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ১৫৫৫।

Allahumma Inni A'uzubika minal hummi wal huzni wa A'uzubika minal azzi wal kasli wa A'uzubika minal bukhli wal zubni wa A'uzubika min golbatiddaini wa kah-rir-rizal.

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চিন্তা—ভাবনা থেকে পানাহ চাই। অপারগতা ও অলসতা থেকে পানাহ চাই। কৃপনতা ও কাপুরুষতা থেকে পানাহ চাই। ঋণের চাপ ও মানুষের জবরদস্তি থেকে পানাহ চাই। 

তখন থেকে ঐ ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথামতো প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় এই দোয়ার আমল করতে লাগলো। পরবর্তি সময়ে সে বললো, আমি রাসুল (সাঃ) এর কথামতো আমল করেছি এবং আল্লাহ তাআলা আমার চিন্তা—ভাবনা, দুশ্চিন্তা, পেরেশানি দূর করে দিলেন এবং অভাবও দূর করে দিলেন। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) বিপদে পড়লে, মুসিবতে পড়লে, অভাব—অনটনে এবং দুশ্চিন্তায় পড়লে এই দোয়াটি বেশী বেশী পড়তেন।

একদা এক মুকাতাব (গোলাম বা কৃতদাস) ব্যক্তি হযরত আলী’র কাছে আসলো এবং বললো “আমি আমার দাস মুক্তির জন্য খুবই পেরেশান। কিন্তু আমার কোন সহায় সম্বল নেই। আমার মালিকের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার যে চুক্তি তা পরিশোধ করার সাধ্য আমার নেই। তাই আমাকে আমার মালিকের কাছ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করুন”। তখন হযরত আলী বললেন, তোমাকে কি আমি এমন একটি দোয়া শিক্ষা দিবো যে দোয়াটি আমাকে রাসুল (সাঃ) শিক্ষা দিয়েছেন? এই দোয়াটি যদি তুমি আমল করো তবে তোমার পাহাড় সমান ঋণ থাকলেও আল্লাহ তাআলা তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তুমি বলো— 

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারমিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান ছিওয়াক”।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালালের মাধ্যমে হারাম থেকে বাঁচাও এবং তোমার অনুগ্রহ ভিন্ন অন্যের মুখাপেক্ষীতা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করো। 

আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি সদা মেহেরবান। আপনি আপনার সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসেন তার চাইতে ৭০গুণ ভালোবাসেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তাই আমাদের যে কোন প্রয়োজনের কথা সৃষ্টিকতার্র কাছেই পেশ করা উচিৎ। আপনার চাওয়া যদি আপনার জন্য মঙ্গলজনক হয় তবে দয়াময় আল্লাহ তাআলা অবশ্যই আপনাকে তা দান করবেন। খোদার রহমতের ভান্ডার এত বিশাল যে আমাদের সামান্য জ্ঞানে সেটার তুলনা করা সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত দোয়ার মাধ্যমে রিজিক তালাশ করুন। 

মনে রাখবেন, দোয়া কবুলের জন্য খোদার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হতে হবে এবং মনে এটাও বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করেছেন। যে ব্যক্তি তার খোদার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তার প্রতি মেহেরবান হয়ে থাকেন। আর যে কোন দোয়া বা আমল কবুল হওয়ার শর্ত হলো হালাল রিজিক খাওয়া, সত্যবাদী হওয়া, মা—বাবার খেদমত করা, পরোপকারী হওয়া, কারো গীবত না করা এবং সবোর্পরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করা এবং যতটা সম্ভব মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা। আপনি যখন দোয়া করবেন তখন অবশ্যই ইসমে আজম পাঠ করে, কান্নাকাটি করে দোয়া করবেন।

আপনি যদি উপরোক্ত গুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকেন তবে এটা নিশ্চিত যে আপনার প্রতিটি দোয়াই দয়াময় আল্লাহ কবুল করে নিবেন এবং খুব দ্রুতই আপনাকে এর ফলাফল দান করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঋণমুক্ত জীবন দান করুন এবং সবোর্ত্তম আমলকারী হিসাবে কবুল করে নিন। আমীন।

0 Comments: