Headlines
Loading...
Zannat Laver Dua | জান্নাত লাভের দোয়া | Prayer For Paradise

Zannat Laver Dua | জান্নাত লাভের দোয়া | Prayer For Paradise

অল্প আমল করেই যারা জান্নাত লাভের আশা করেন তাদের উচিত প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে কিছু তাসবিহ, এবং দোয়া পাঠ করা। এই প্রবন্ধটিতে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার দোয়া সমুহ তুলে ধরা হয়েছে যাতে করে আপনি খুব সহজেই শিখে নিয়ে নিয়মিত আমল করতে পারেন। আপনি যদি সত্যি সত্যি রসুলপ্রেমী হয়ে থাকেন তা’হলে আপনার এই দোয়াগুলোর আমল বাদ দেয়া উচিত হবে না। কারণ এই দোয়াগুলো রসুলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত পড়তেন এবং তাঁর সাহাবীদের নিয়মিত পড়ার জন্য উৎসাহিত করতেন।

আমরা প্রায়ই দেখি যে, ফরজ নামাজের সালাম ফেরানো মাত্রই ঈমাম সাহেব সম্মিলিত দোয়া/মুনাজাত করে নামাজ শেষ করে থাকেন। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কখনও সম্মিলিত মুনাজাত করেন নি। বরং তিনি প্রত্যেক ফরজ সালাতের সালাম ফেরানোর পর আওয়াজ করে ১ বার “আল্লাহু আকবার” পাঠ করতেন। এরপর ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেন। নামাজ আদায়ে যে সব ভূল হয়েছে তা থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। অতঃপর ঈমাম অবস্থায় কিবলার দিক থেকে ঘুরে মুক্তাদির দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং কিছু তাসবিহ, এবং দোয়া পাঠ করতেন যা বিস্তারিত আকারে তুলে ধরা হলো। 

প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে রসুলুল্লাহ (সাঃ) হাতের কড়ায় সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুল্লিাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার পাঠ করতেন। এরপর ১ বার পড়তেন, 

لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণঃ 
“লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং ক্কদির”। 
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোন শরীক নেই। প্রশংসা শুধু তারই। তিনি সব কিছুর উপর সামর্থবান। বুখারি ও মুসলিম শরীফ।

আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুল্লিাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করার পর ১ বার “লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং ক্কদির” পাঠ করবে তার যদি সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ থাকে তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দ্বিতীয় দোয়াটি হলো-

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ

উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরম” ১ বার পাঠ করতেন। 
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি শান্তির প্রতীক। তুমিই শান্তির উৎস এবং শান্তির ধারা তোমার কাছ থেকেই প্রবাহিত। তুমি বরকতময়। হে মহত্ব ও সম্মানের অধিকারী’। মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৩৬২, আবু দাউদ হাদীস নং ১৫১২।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর তৃতীয় দোয়াটি হলো-

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআন, ওয়া রিজকান ত্বয়্যিবান, ওয়া আমালান মুতাক্কাব্বালান”।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।

এরপর তিনি ১বার আয়াতুল কুরসী পাঠ করতেন।

اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم

উচ্চারণঃ আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। 

রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর ১ বার আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার জান্নাতে যেতে মৃত্যু ব্যতিত আর কোন কিছুই বাঁধা দিতে পারবে না।

শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে। (বুখারী)।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পঞ্চম দোয়াটি হলো-

“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াকা”।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ষষ্ঠ দোয়াটি হলো-

الَْلهُمَّ أَجِِرْنَا مِنَ النَّار
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নার” ৭ বার পাঠ করতেন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের নামাজ শেষে ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’ ৭বার পাঠ করবে সে যদি ওই রাতে বা দিনে মারা যায় তাহলে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে। (সুনানে আবু দাউদঃ ২/৭৪১)

রাসূল(সা:) বলেছেন, এ দোয়া নিয়মিত পড়লে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত লিখে দেওয়া হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর কারো সঙ্গে কথা না বলে এই দোয়াটি [আল্লাহুম্মা আযিরনী মিনান্নার] ৭ বার পাঠ করলে উক্ত দিনে বা রাতে মৃত্যু হলে তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি লিখে দেওয়া হয়। (মেশকাতুল মাসাবীহ)।

ইমাম মুসলিম ইবনে হারেস ইবনে মুসলিম তামীমী (রহঃ) বলেন, আমার পিতা ইবনে হারেস (রাঃ) এক যুদ্ধ থেকে ফিরার পর রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, ফযরের নামায শেষে কারো সাথে কথা বলার আগে তুমি ৭ বার এ দোয়া পড় “আল্লাহুম্মা আযিরনী মিনান্নার”। অর্থাৎ আয় আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। যদি সেদিন তোমার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত বলে লিখে দিবেন। এমনিভাবে মাগরিবের নামায শেষে কারো সাথে কথা বলার আগে তুমি ৭ বার একই দোয়া পড়ো এবং যদি সে রাত্রে তোমার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত বলে লিখে দিবেন।(আবু দাউদ)।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সপ্তম দোয়াটি হলো-

للَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

উচ্চারণঃ  “আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা”।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার জিকির করতে, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শোকর আদায় করতে এবং সুন্দর করে ইবাদত করতে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। 

হজরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। প্রিয়নবীর জীবদ্দশায় তাকে মুফতি হিসেবে গণ্য করা হতো। তিনি কুরআনের নির্ভরযোগ্য কারি এবং সুবিজ্ঞ আলিম ছিলেন।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যে দিক নির্দেশনা উম্মতে মুসলিমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল অত্যন্ত সুদর্শন, মিষ্ট স্বভাব, মুক্ত হস্ত দানশীল, ভদ্র, সুবক্তা ও সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাত ধরে বলেন, হে মুআজ! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি। তিনি বলেন, হে মুআজ! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়াটি (উপরোক্ত) কখনো পরিহার করবে না। আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫২২।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অষ্টম দোয়াটি হলো-

আল্লাহুম্মা লা—মানিয়া লিমা আত্বাইতা। ওয়া লা—মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু”।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি যা প্রদানের ইচ্ছা কর, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না এবং তুমি যাতে বাঁধা দাও তা কেউ প্রদান করতে পারে না এবং কোন সম্পদশালীর সম্পদই তোমার নিকট তাকে রক্ষা করতে পারে না। বুখারী ও মুসলিম শরীফ।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নবম দোয়াটি হলো-

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

উচ্চারণঃ “লা—ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িং ক্কদির। আল্লাহুম্মা লা—মানিয়া লিমা আত্বাইতা। ওয়া লা—মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু”। (১বার)। 

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা শুধু তারই। তিনি সব কিছুর উপর সামর্থবান। আপনি দিলে কেউ বাঁধা দিতে পারে না। আপনি না দিলে কেউ দিতে পারে না, কেউ উপকার করতে পারে না। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দশম দোয়া/আমলটি হলো--

ফজর ও মাগরীব বাদ সূরা ইখলাস ৩ বার, সূরা ফালাক ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার। অনান্য ফরয সালাতের শেষে এ ৩টি সূরা একবার করে।

যদি কোন মোমিন ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দোয়া সমুহের আমল করতে পারেন তাহলে নিশ্চিতভাবে কিয়ামতের দিন খোদার রহমতে ঐ ব্যক্তি হাসতে হাসতে জান্নাতে যেতে পারবেন। 

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে তার সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করে নিন এবং আমাদের নিয়মিত এই আমল করার তাওফিক দান করুন। তার ইবাদত-বন্দেগিতে আমাদের জীবন সিক্ত রাখুন। আমিন।

0 Comments: