Headlines
Loading...
Namaz Waqt and Rakat in Salat | নামাজের ওয়াক্ত এবং রাকাত সংখ্যা

Namaz Waqt and Rakat in Salat | নামাজের ওয়াক্ত এবং রাকাত সংখ্যা

নামাজ হলো ধ্যানের একটি সর্বোৎকৃষ্ট রুপ যেখানে বান্দা তার খোদার প্রতি গভীর মনোনিবেশ করেন। নামাজ এমন একটা ইবাদত যা নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আদায় করতে হয়। ইহকালে এবং পরকালে আল্লাহর রহমত পেতে চাইলে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ও হাদিস শরীফে নামাজ সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব ৮২ বার ব্যক্ত হয়েছে। নামাজ শিক্ষার আগে নামাজ সম্বন্ধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জানা অতীব জরুরী। যেমন ওযু’র দোয়া, ওযু করার নিয়ম, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ত, কমপক্ষে ১০-১২টি সুরা মুখস্ত করা, সানা, রুকু ও সিজদা’র দোয়া জানা অত্যন্ত জরুরী। 

নামাজের ওয়াক্ত এবং রাকাআত সংখ্যা

নামাজের সময় মূলত সূর্যের অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সূর্য কখনো পূর্ব আকাশে, কখনো মধ্য আকাশে কখনও বা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। আর সূর্যের এরুপ অবস্থানের সাথে সাথে নামাজের ওয়াক্তেরও পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক সচেতন মুসলিমের নামাজের সময় জানাটা অতিব জরুরী। কারণ ঋতুভেদে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তন হয় এবং নামাজের সময়সূচীতেও পরিবর্তন আসে। 

ফজরঃ রাতের শেষ দিকে পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখা দেখা যায় তাকে সুবহ সাদিক বলে। এই সুবহ সাদিক হওয়ার সাথে সাথে ফজর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্য ওঠার প্রায় ১৫ মিনিট আগে ওয়াক্ত শেষ হয়। ফজরের নামাজ মোট ৪ (চার) ওয়াক্ত। ২ (দুই) রাকাআত সুন্নত এবং ২ (দুই) রাকাআত ফরজ। প্রথমে সুন্নত এবং পরে ফরজ নামাজ পড়তে হয়। ফজরের সুন্নত নামাজ কোন অবস্থাতেই বাদ দেয়া যাবে না। 

ফজরের নামাজের উপকারিতাঃ

ভোরবেলা ফেরেশতারা ফজরের নামাজ পড়া ব্যক্তিদেরকে প্রত্যক্ষ করতে পৃথিবীতে নেমে আসেন। আল্লাহ তা’আলা এই সকল ফেরেশতাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকেন। তাই প্রত্যেক ঈমানদার মুসলিম ভাই-বোনদের ফজরের নামাজ পড়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ ফজরের নামাজ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। হাদিসে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত আদায় করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। ফজরের ‘ফরজ’ নামাজ শেষে কিছু আমল করা ভালো। এতে করে ইইকালে পার্থিব উন্নতি এবং পরকালে নাজাত পাবার সম্ভাবনা অধিক। আমাদের প্রিয় নবী প্রত্যেক ফরজ সালাত বা নামাজ শেষে কিছু তাসবিহ, জিকির ও দোয়া পড়তেন। এই তাসবিহ, জিকির ও দোয়াগুলো প্রত্যেক নামাজি ব্যক্তির নিয়মিত পাঠ করা উচিৎ। প্রিয় নবী, দয়ার নবী যে তাসবিহগুলো পাঠ করতেন সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।

১। তওবা ও ইস্তিগফারের দোয়া “আস্তাগফিরুল্লাহ হাল্লাযি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্কইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি” ৩ বার পাঠ করতেন।
২। “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরম” ১ বার পাঠ করতেন।
৩। সুবহান আল্লাহ ৩৩ বার
আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার
আল্লাহু আকবার ৩৩ বার পাঠ করতেন। এরপর “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্কদির” ১ বার পাঠ করতেন।
৪। “আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা” ১ বার পাঠ করতেন।
৫। “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান না-ফি’আ ওয়া রিজকান ত্বয়্যিবা ওয়া আমালান মুতাক্কাব্বালান” ১ বার পাঠ করতেন।
৬। আয়াতুল কুরসি ১ বার পাঠ করতেন।
৭। সুরা ইখলাস ৩ বার, সুরা ফালাক ৩ বার এবং সুরা নাস ৩ বার পাঠ করতেন।

যোহরঃ সূর্য যখন মধ্য আকাশ হতে কিছুটা ঢলে পড়ে তখন থেকে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং আসরের নামাজের কিছুটা আগ পর্যন্ত এর সময় থাকে। যোহরের নামাজ মোট ১২ রাকাআত। প্রথমে ৪ রাকাআত সুন্নত, পরে ৪ রাকাআত ফরজ, তারপর ২ রাকাআত সুন্নত, এবং শেষে ২ রাকাআত নফল আদায় করতে হয়। 

যোহরের নামাজের উপকারিতাঃ

হাদিসে উল্লেখ আছে, যোহরের নামাজের সময় বেহেস্তের সবগুলো দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এই সময় সালাত আদায়কারী ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা’আলার রহমত বর্ষিত হয়। যোহরের নামাজ পড়লে আল্লাহ তা’আলা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির উপর সন্তষ্ট হন এবং শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তার বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।

আসরঃ সূর্য যখন ঠিক পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে তখন থেকে সূর্যাস্তের প্রায় ৩০ মিনিট আগ পর্যন্ত এর সময় থাকে। আসরের নামাজ মোট ৮ রাকাআত। প্রথমে ৪ রাকাআত সুন্নত, পরে ৪ রাকাআত ফরজ। 

আসরের নামাজের উপকারিতাঃ

আসরের নামাজের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আসরের নামাজ না পড়লে ব্যক্তির সব নেক আমল বাতিল হয়ে যায় এবং ঐ ব্যক্তির সমস্ত সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়। তাই সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আসরের নামাজ আদায় করা জরুরী। আসরের নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা দান করবেন। 

মাগরিবঃ সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত শুরু এবং পশ্চিম আকাশে সূর্যের লালিমা থাকা পর্যন্ত নামাজের ওয়াক্ত থাকে। মাগরিব নামাজের ওয়াক্ত খুবই সংকীর্ণ। এই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে নামাজ আদায় করা উচিৎ। মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাআত। প্রথমে ৩ রাকাআত ফরজ, তারপর ২ রাকাআত সুন্নত এবং শেষে ২ রাকাআত নফল।

মাগরিবের নামাজের উপকারিতাঃ

মাগরিবের নামাজ পাঠকারী ব্যক্তির উপর আল্লাহ তার সমস্ত নিয়ামত ও পুরস্কার বর্ষণ করেন। এ সময় নামাজ পাঠকারী ব্যক্তির সকল দোয়া ও ইচ্ছা আল্লাহ তা’আলা পূরণ করে থাকেন, সম্পদ ও পরিবারে সফলতা দান করে থাকেন। 

এশাঃ মাগরিব এর নামাজ শেষ হলেই এশা’র নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। অর্থ্যাৎ পশ্চিম আকাশে সূর্যের লালিমা শেষ হবার সাথে সাথে এশা’র নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। এশা’র নামাজের ওয়াক্ত ঋতুভেদে সাড়ে ৭টা থেকে ৯টায় শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত এর সময় থাকে। এশা’র নামাজ মোট ১৭ রাকাআত। প্রথমে ৪ রাকাআত সুন্নত, পরে ৪ রাকাআত ফরজ, তারপর ২ রাকাআত সুন্নত, ২ রাকাআত নফল, ৩ রাকাআত বিতর এবং শেষে ২ রাকাআত নফল।

এশা’র নামাজের উপকারিতাঃ

এশা’র নামাজ জামাতে আদায় করলে অর্ধেক রাত ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়। 

নামাজের নিষিদ্ধ সময়ঃ

১। সূর্যদয়ের সময় অর্থ্যাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য পূর্ব আকাশে পুরোপুরি উদিত না হয়। (প্রায় ১৫-২০ মিনিট)
২। সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে থাকে (দুপুর ১২টা থেকে ১২ঃ১৫ মিনিট)
৩। সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় (এ সময়টি প্রায় ১৫-২০ মিনিট)

একা একা নামাজ পড়ার চাইতে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করাই উত্তম। তাই প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের আযানের সাথে সাথে অজু করে মসজিদে প্রবেশ করেই প্রথমে ২ রাকআত দুখুলুল মসজিদ বা তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ এবং তারপর সুন্নত নামাজ পড়ে নিতে হবে। এরপর ঈমামের সাথে জামাতে ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। ফরজ নামাজ শেষে অন্যান্য নামাজগুলো একা একা আদায় করতে হবে। প্রকৃত মুসলমান হিসাবে নিজেকে দাবি করতে চাইলে অবশ্যই প্রতিদিন সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন।

নামাজ সম্পর্কে আরো জানতে এইখানে ক্লিক করুন

0 Comments: