Headlines
Loading...
Halal and Haram The Fundamental Concepts | হালাল ও হারাম মৌলিক ধারণা

Halal and Haram The Fundamental Concepts | হালাল ও হারাম মৌলিক ধারণা

“হালাল” শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে যার সহজ অর্থ হলো “জায়েজ” তথা গ্রহণযোগ্য অর্থ্যাৎ শরীয়তের ভাষায় যা করার অনুমতি দিয়েছে। বিপরীতভাবে “হারাম” বলতে বুঝায় “নিষিদ্ধ” অর্থ্যাৎ যা গ্রহণযোগ্য নয় এবং হারাম কাজ করার পরিণামে পরকালে শাস্তি অনিবার্য। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন; ‘হে মানবসকল! তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তর মধ্য হতে ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা আয়াতঃ ১৬৮)। 

ইসলাম হলো খাদ্যাভাস, সামাজিক নিয়ম-কানুন, ব্যক্তিগত আচার-আচরণ এবং অর্থনৈতিক লেনদেন সহ বিভিন্ন দিককে আবর্তন করে একটি ব্যাপক জীবন ব্যবস্থা। আর এই ব্যাপক জীবন ব্যবস্থার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো হালাল ও হারামের সুস্পষ্ট ধারণা যা মুসলমানদের জন্য কি কি জায়েজ এবং কি কি নিষিদ্ধ তা নির্ধারণ করে দেয়। হালাল এবং হারাম শব্দ দুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ এই শব্দ দু’টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা না জানলে আপনি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেন এবং প্রকৃত ইসলামী জীবন ব্যবস্থা থেকে ছিটকে যেতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে আমাকে পরীক্ষা করার জন্য নির্দিষ্ট হায়াত দিয়ে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের অন্তরেই আল্লাহ তাআলা ভালো-মন্দের জ্ঞান এবং সাথে একটি ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। আপনি এই ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে ভালো বা মন্দের পথ বেছে নিতে পারেন। আপনি যখন ভালো কোন কাজ করেন তখন আপনার মন পুলকিত হয়ে ওঠে। আবার যখন কোন খারাপ কাজ করেন তখন ঠিক তার উল্টোটি ঘটে। আপনার বার বার মনে হতে থাকে কেন আপনি এমনটি করলেন। এই অনুভূতির দ্বারাই মানুষ তার নৈতিকতা প্রকাশ করে থাকে। 

ইসলামে হালাল ও হারামের তাৎপর্যঃ

ইসলামে হারাম ও হালাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ হালালের নীতি মেনে চলা এবং হারাম থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করতে পারে। 

খাদ্য ও পাণীয় ক্ষেত্রে হালাল ও হারামঃ

হারাম ও হালালের যতগুলো দিক আছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো খাদ্যতালিকা অনুশীলন। কিছু সংখ্যক পশু-প্রাণী বাদে অধিকাংশই হালাল তালিকার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যেসব পবিত্র বস্তু জীবিকারুপে দান করেছি তা হতে ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা একান্তভাবে তাঁরই ইবাদত কর”। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৭২)। নিম্নোক্ত প্রাণীদের মাংস খাওয়া ইসলামের খাদ্যতালিকা বিরোধী। যেমনঃ

  • শুয়োরের বা শুকরের মাংস
  • মৃত পশুর মাংস
  • শ্বাসরোধ করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলা পশুর মাংস
  • কোন উঁচুস্থান থেকে পড়ে মারা যাওয়া পশুর মাংস
  • বন্য প্রাণীদের দ্বারা গ্রাস করা পশুর মাংস
  • মাংসাশী প্রাণীর মাংস যেমনঃ কুকুর, নেকড়ে, বাঘ, সিংহ, ইত্যাদি।
  • শিকারী পাখি যেমনঃ ঈগল, শকুন, পেঁচা, ইত্যাদি।
  • সরীসৃপ প্রাণীর মাংস যেমনঃ কুমির, সাপ, ইত্যাদি।

অর্থ ও ব্যবসায় হালাল ও হারামঃ

লেনদেন অর্থ হচ্ছে একে অন্যের মধ্যে স্বার্থ ও মুনাফার বিনিময় করা। যেমন ব্যবসা, শিল্প ও কারিগরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সেখানে একজন অন্য জনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য পরিশ্রম করে এবং তার বিনিময় দান করে। যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসার নামে সুদ, জুয়া, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ হস্তগত করা হয় সেসব পন্থায় সম্পদ অর্জন বৈধ ব্যবসার মধ্যে গণ্য নয় বরং তা হারাম ও বাতিল পন্থা। তেমনি যদি স্বাভাবিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও লেনদেনের মধ্যে উভয় পক্ষের আন্তরিক সন্তষ্টি না থাকে তবে সেরুপ ক্রয়-বিক্রয়ও বাতিল এবং হারাম। কিছু ব্যবসায়ী আছেন যাদের কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের হালাল ব্যবসা হারামে পরিণত হচ্ছে। যেমনঃ

ওজনে কম দেওয়াঃ

অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা পণ্য ক্রয় করার সময় সঠিক ওজনে পণ্য ক্রয় করে থাকেন কিন্তু বিক্রয় করার সময় ওজনে কম দেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, মন্দ পরিণাম তাদের যারা মাপে বা ওজনে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং তাদের জন্য মাপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। (সুরা মুতাফ্ফিফিন, আয়াত ১-৩)। ওজনে কম দেওয়া এবং ঠকানোর মাধ্যমে একজন ক্রেতার হক নষ্ট করা হয়। কিয়ামতের দিন কারো হক পূরণের জন্য আল্লাহ তাআলা আপনার আমলনামা হতে তা পূর্ণ করে দিবেন।

জুলুম করাঃ

কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা ক্রেতার উপর নিয়মিত জুলুম করে থাকেন। অর্থ্যাৎ যে টাকায় সে নিজে ক্রয় করে, সেটা বিক্রয় করার সময় ৩ বা ৪গুণ বেশী দামে বিক্রি করে থাকে। আল্লাহ তআলা বলেন, “জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না”। (সুরা আনআম, আয়াত-৫৭)। তিনি আরো ইরশাদ করেন, অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে। (সুরা আশুরা, আয়াত-২২৭)। 

পণ্যের ত্রুটিঃ

পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে বিক্রয় করা জঘন্যতম অন্যায় ও প্রতারণার কাজ। যেমন ১০টি ভালো পণ্যের মধ্যে ১টি ত্রুটিযুক্ত পণ্য চালিয়ে দেওয়া। হাদীসে এসেছে নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে বরং গোপন করে বিক্রয় করে সে সর্বদা আল্লাহর গজবের মধ্যে থাকে এবং ফেরেশতারা সব সময় তাকে অভিশাপ করতে থাকে। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২৪৭)।

মিথ্যা শপথঃ

অধিকাংশ ব্যবসায়ী মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। মিথ্যা শপথের মাধ্যমে ব্যবসা করা জঘন্য পাপ। বাংলাদেশী কাপড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যায়। মিথ্যা শপথকারী ব্যবসায়ীদের জন্য আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। কিয়ামত দিবসে এই শ্রেণীর লোকদের সাথে আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেনও না। 

হারাম খাওয়ার শাস্তি

যদি কোন ব্যক্তি হারাম খাবার খায় তবে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন না। হারাম খাবার খেলে চেহারার নূর কমে যায় এবং চেহারা কালো হয়। হারামখোর ব্যক্তিকে মানুষ সর্বদাই ঘৃনা করে থাকে এবং তার সবকিছুতে বরকত কমে যায়। হারাম খাদ্য খাওয়ার কারণে ইবাদত কবুল হয় না। আর হারাম খাদ্য গ্রহণকারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়। হারাম খাদ্য খেলে শরীরের শক্তি কমে যায়। যে শরীর হারাম খাদ্য খেয়ে গঠিত হবে তা জান্নাতে যেতে পারবে না। হারাম খাদ্য খাওয়ার কারণে মৃত্যুর পর কবর থেকেই শাস্তি শুরু হয়ে যায়। 

হালাল ও হারাম সম্পর্কে হাদিসঃ 

হযরত মিকদাম ইবনে মায়াদী কারাব (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মানুষের মধ্যে সেই খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম, যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হাতে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা করে থাকে। আর আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত দাউদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই হতে খাবার গ্রহণ করতেন। (বুখারী শরীফ)। 

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূল (সাঃ) বলেছেন, হারাম পথে উপার্জন করে বান্দা যদি তা দান করে দেয় আল্লাহ সে দান গ্রহণ করেন না। প্রয়োজন পূরণের জন্য সে সম্পদ ব্যয় করলেও তাতে কোন বরকত হয় না। ঐ ব্যক্তি যদি হারাম পথের উপার্জিত সম্পদ রেখে মারা যায় তবে সে সম্পদ তার জাহান্নামের সফরে তার সাথী হবে। আল্লাহ অন্যায় দিয়ে অন্যায়কে মিটান না বরং তিনি কোন নেক কাজ দিয়ে অন্যায়কে মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই মন্দ, মন্দকে দূর করতে পারে না। (মিশকাত শরীফ)।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্দ্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। হাদিসটি ইমাম ইবনে মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আত-তালীকুর রাগীব ৩/৭, মিশকাত ৩৫০০।

উপসংহারঃ 

হালাল এবং হারাম ইসলামিক নৈতিকতার মেরুদন্ড গঠন করে এবং মুসলমানদের তাদের দৈনন্দিন জীবনে পথ দেখায়। এই ধারণাগুলি খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত আচরণ পর্যন্ত বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভূক্ত করে। হালালকে মেনে চলা এবং হারামকে এড়িয়ে চলার মাধ্যমে, মুসলমানদের লক্ষ্য হল এমন একটি জীবন যাপন করা যা আল্লাহ তাআলার কাছে খুশি, আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ এবং নৈতিকভাবে ন্যায় পরায়ণ। হালাল ও হারামের উৎপত্তি, সংজ্ঞা, তাৎপর্য এবং ব্যবহারিক প্রভাব বুঝা মুসলিমদের জন্য তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপন করতে চাওয়া এবং অমুসলিমদের জন্য ইসলামী শিক্ষার বৈচিত্র ও সমৃদ্ধির প্রশংসা করতে চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

0 Comments: