Headlines
Loading...
Surah Al-Ikhlas Bangla | সূরা আল ইখলাস এর বাংলা অর্থ অনুবাদ ও ফযিলত

Surah Al-Ikhlas Bangla | সূরা আল ইখলাস এর বাংলা অর্থ অনুবাদ ও ফযিলত

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ
ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَ
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ




Qul huwaallahu ahad
বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
Allahus Somad
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
Lam yalid walam youlad
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
Walam yakullahu kufuwan ahad
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

বাংলা উচ্চারণ

কুলহু আল্লাহু আহাদ।
আল্লাহুস সামাদ।
লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ।
ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

বাংলায় অনুবাদ

বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

সুরা ইখলাস কুরআনুল কারিমের ১১২তম  সুরা। ৪ আয়াত বিশিষ্ট এ সুরাটি হিজরতের আগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরাটিতে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

সূরাটি শুরু করা হয়েছে "কু’ল" শব্দটি দিয়ে যার অর্থ "বলো"।  এখানে আমাদের সাবধান থাকা উচিত কু’ল শব্দটি যেন গলার গভীর থেকে উচ্চারিত হয়। আর তা না করা হলে এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে।  শুধু ‘কুল’ অর্থ হলো "খাও"।  সুতরাং মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি।

পুরো সূরাটিতে একটি মাত্র যের রয়েছে (يَلِدْ). আল্লাহ এখানে বলেছেন তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আল্লাহ কতো বৈজ্ঞানিকভাবে এতো অল্প কথায় মানুষের সৃষ্টির পক্রিয়ার কথা বলেছেন। প্রশ্ন আসতেই পারে কিভাবে? আসুন একটু ব্যাখ্যা করা যাক।  ইয়ালিদ ( يَلِدْ ) থেকে যদি আপনি উপররে দিকে যান তাহলে ২৩ টি পৃথক অক্ষর পাবেন। আর নিচের দিকে যান ২৩ টি পৃথক অক্ষর পাবেন। আর বিজ্ঞান বলে যে মানুষ সৃষ্টি হয় ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থেকে। তিনি (আল্লাহ) কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এটা বলে বুঝানো হল ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম এর সাথে আল্লাহর কোন সম্পৃত্ততা নেই। আপনি যদি ইয়ালিদ ( يَلِدْ ) থেকে উপর দিকে যান ৭টি শব্ধ পাবেন আর নিচের দিকে গেলে ৭টি শব্ধ পাবেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে মানুষ মাতৃগর্ভে ৭টি পর্যায়ে গঠিত হয়। আল্লাহ কতো জ্ঞানী হলে এতো বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছোট একটি সূরাতে আল্লাহর নিজের পরিচয়ের পাশাপাশি মানুষ সৃষ্টির পক্রিয়া সম্পর্কে বলতে পারেন।

সুরার বৈশিষ্ট্য

সুরাটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার শেখানো ভাষায় তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন। যে পরিচয় তুলে ধরতে আল্লাহ তাআলা নিজেই এ সুরাটি নাজিল করেছেন। এ সুরার মতো কোনো সুরায় আল্লাহর একত্ত্ববাদের বিষয়টি বর্ণিত হয়নি। এ সুরায় আল্লাহর সৃষ্টিরহস্যের নিঃসরণ করা হয়েছে।

সুরা ইখলাসের বিষয়বস্তু

  • আল্লাহ তাআলা তার পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে সুরা ইখলাসের ৪ আয়াতের মাধ্যমে ৪টি বিষয় তুলে ধরেছেন। আর তাহলো-
  • সুরা ইখলাসে আল্লাহ তাআলা তার একত্ববাদের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
  • তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কোনো কিছুতেই মুখাপেক্ষী নন। কারো কাছে তার কোনো প্রয়োজন নেই। সব কিছুতেই তিনিই যথেষ্ট।
  • তার জন্ম-সৃষ্টিতে কারো কোনো হাত নেই। তিনি কারো জনক নন আবার তাকে কেউ জন্ম দেননি। তিনি জন্ম-সৃষ্টি দেয়া ও হওয়া থেকে পূত-পবিত্র এবং মুক্ত।
  • জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই এবং চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অতুলনীয়। চারটি আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
  • তার সমকক্ষ কেউ নেই। অর্থাৎ তিনি যে এক ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তার ওপর তাকিদ করা হয়েছে, সত্যয়ন করা হয়েছে যে, তার সমকক্ষ কেউ নেই।

সুরাটি নাজিলের কারণ

হজরত আনাস রাদিয়ল্লাহু আনহু বলেন, ‘খায়বারের কয়েকজন ইয়াহুদি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বলল- হে আবুল কাসেম! আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নূর থেকে, আদমকে মাটি থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনার রব সম্পর্কে আমাদের জানান, তিনি কোন বস্তু থেকে সৃষ্ট?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন কোনো জবাব দেননি। অতপর (তাদের উত্তরে) হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম সুরা ইখলাস নিয়ে হাজির হন।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন নাজরানের সাতজন খ্রিস্টান পাদ্রি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন-‘আমাদের বলুন, আপনার রব কেমন? তিনি কিসের তৈরি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার রব কোনো জিনিসের তৈরি নয়। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুরা ইখলাস নাজিল করেন।

সুরাটির মর্যাদা

সুরা ইখলাস অনন্য মর্যাদা সম্পন্ন একটি সুরা। সুরাটিকে কুরআনের ৩ ভাগের এক ভাগ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সাহাবিদের বললেন, তোমারা কি এক রাতে কুরআন মাজিদের ৩ ভাগের একভাগ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, সুরা ইখলাস কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’ (বুখারি, নাসাঈ)

সুরাটির উচ্চারণ, অর্থ, মর্যাদা ও তেলাওয়াতের ফজিলতগুলো তুলে ধরা হলো-

সুরা ইখলাস-এর ভাব ও মর্মার্থ বুঝে পড়লে তাতে বান্দার অন্তরে আল্লাহর গুণাবলী গেঁথে যাবে। মনে প্রাণে ওই ব্যক্তি শিরকমুক্ত হয়ে প্রকৃত ঈমানের অধিকারী হবে। আর তার বিনিময়ে সে লাভ করবে দুনিয়া ও পরকালের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত। 

আল্লাহর ভালোবাসা লাভ

রাসুল (সাঃ) এর সময় একবার এক এলাকার একজন ইমাম সাহেবের নামে বিচার আসলো। বিচারের দাবী ছিল যে সেই সাহাবী প্রতি ওয়াক্ত নামাজে শুধু সূরা ইখলাস পড়ত। এই প্রসঙ্গে সেই সাহাবীকে তিনি জিজ্ঞেস করলে সাহাবা উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সূরা ইখলাসে আল্লাহর পরিচয় বর্ণিত আছে এ কারণে এ সূরাকে আমি অনেক ভালবাসি। তাই আমি সব নামাজে এই সূরা পড়ি। এই কথা শুনে রাসুল (সাঃ) কিছু বলার আগেই আল্লাহ বলে পাঠালেন যে শুধু তার সূরা ইখলাসের প্রতি এই ভালবাসাই তার জন্য জান্নাত নিশ্চত করে দিয়েছে।

ফেরেশতারা জানাজায় শরিক হবে

যে ব্যক্তি অধিক পরিমানে সূরা ইখলাস পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর লাশ বহন করার জন্য ফেরেশতা হয়রত জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরন করবেন। সেই ফেরেশতারা তাঁর লাশ বহন করবে এবং জানাজায় শরিক হবে। অধিক পরিমানে সূরা ইখলাস পাঠ করার কারণে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিবেন।

জান্নাত লাভ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে শুনলেন। তিনি বললেন, ‘এটা তার অধিকার।’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, তার অধিকার কী? তিনি উত্তরে বললেন- ‘তার অধিকার হচ্ছে জান্নাত।’ (মুসনাদে আহমাদ)

গোনাহ থেকে মুক্তি

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঋণগ্রস্ত হলে তা ক্ষমা হবে না।’ (তিরমিজি)

দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি

হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যতার অভিযোগ করল তিনি বললেন, ‘যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্যতা দূর হয়ে যায়।’ (তাফসিরে কুরতুবি)

আসুন আমরা দৈনিক বেশি বেশি করে সূরা ইখলাস পাঠ করি। 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুরা ইখলাসের ভাব ও মর্মার্থ নিজেদের মধ্যে ধীর বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত মর্যাদা ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, সূরা ইখলাস 

0 Comments: