তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, ও জাওয়াল নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জানুন | Learn about the virtues of Tahajjud, Ishraq, Chasht, and Jawal prayers
তাহাজ্জুদঃ তাহাজ্জুদ নামাজের অর্থ হল রাতের নামাজ। ফরজ নামাজের পর যত প্রকার নামাজ আছে তার মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বোত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। রাতের দ্বিতীয় প্রহরে ঘুম থেকে জেগে মহান আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় তা-ই তাহাজ্জুদ নামাজ। ফকিহগণ বলেন, এশার নামাজ শেষে ঘুমানোর পর রাতের দুই-তৃতীয়াংশে আবার ঘুম থেকে উঠে এই নামাজ পড়তে হয়। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া আল্লাহ তা’আলার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় আমল।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বঃ
রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভূ আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিয়ে দিবো। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। (মুসলিম, মেশকাত-১০৯ পৃঃ)।
পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য আজান দেওয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। রাসুল (সাঃ) কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক আরো বলেন, “এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় আপনার প্রভূ আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন।
কখন পড়বেন, কত রাক’আত পড়বেন?
সাধারণতঃ রাত ২টা থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কিছু আগ পর্যন্ত এই নামাজের সময় নির্ধারিত। এই নামাজ দুই দুই রাক’আতের নিয়তে পড়তে হয় এবং ২ রাক’আত থেকে ১২ রাক’আত পর্যন্ত পড়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাক’আত, কখনো ৮ রাক’আত এবং কখনো ১২ রাক’আত পড়েছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়মঃ
এই নামাজের জন্য কোন সুরা নির্দিষ্ট নেই। সুরা ফাতিহার পর কোরআন শরিফের যে কোন সুরা বা আয়াত দিয়ে এই নামাজ পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত একা পড়তে হয়। তবে রামাজান মাসে জামায়াতে পড়া জায়েজ আছে। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে কুরআনে তাদেরকে মুহসেনীন ও মুত্তাকি নামে অভিহিত করা হয়েছে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলা এই নামাজ আদায়কারীকে চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী করবেন।
কোথায় পড়া উত্তমঃ
ঘরে পড়া উত্তম। তবে ক্ষেত্র বিশেষে মসজিদে পড়াও জায়েজ আছে। উচু বা নিচু গলায় পড়া জায়েজ আছে তবে মহিলারা নিচু গলায় পড়বেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলতঃ
তাহাজ্জুদ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল করে এবং সৎপথে অবিচল রাখে। তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথনের এক মহান অবলম্বন। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করে। তাহাজ্জুদ নামাজের বদৌলতে মানুষ উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং নামাজ শেষে ইস্তেগফার করে এসব মানুষকে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মুহসেনীন বা তাঁর প্রিয় বান্দা হিসাবে ঘোষনা করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন-আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। [সুরা ফুরকানঃ৬৩-৬৪] (সুরা মুযাম্মিল-৬)
ইশরাকঃ ফজরের নামাজের পরে একই জায়নামাজে বসে সূর্য পুরোপুরিভাবে উদিত হওয়ার প্রায় আধাঘন্টা সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পর যে নামাজ পড়া হয় সেটি হলো ইশরাকের নামাজ। এই নামাজ দুই রাকআত। এই নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। সুরা ফাতিহার পর যে কোন সুরা দিয়ে এই নামাজ আদায় করা যায়।
আপনি যদি সকাল ৮টা থেকে শুরু করে সূর্য মধ্য আকাশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে নামাজ পড়েন সেটি হবে চাশতের নামাজ। চাশতের নামাজ দুই রাকআত থেকে ১২ রাকআত পর্যন্ত পড়া যায়। যে ব্যক্তি চাশতের দু’রাকা’আত নামাজের প্রতি যতœবান হলো তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। যে ব্যক্তি চাশতের ১২ রাক’আত নামাজ পড়ে নেয় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি স্বর্ণের ঘর বানাবেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। চাশতের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। সুরা ফাতিহার পর যে কোন সুরা দিয়ে এই নামাজ আদায় করা যায়।
সালাতুয জাওয়াল বা জাওয়ালের নামাজঃ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) গুরুত্বের সাথে প্রায় সময়ই এই আমলটি করতেন। সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে ঢলে পড়তো অর্থ্যাৎ সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার আধা ঘন্টা কমবেশী সময়ের মধ্যে তিনি চার রাকাআত নামাজ পড়তেন। সালাতুয জাওয়াল নামাজ হলো যুহর নামাজের আগের নামাজ। সহজ কথায় সালাতুত দোহা বা চাশতের নামাজ বলতে আমরা যা বুঝি সালাতুয জাওয়াল হলো তার পরবর্তিতে আদায় করার মতো নামাজ। যুহর নামাজের আযান দেওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে সালাতুয জাওয়াল নামাজ পড়া যায়। নফল নামাজের নিয়তে এই নামাজ এক সালামে চার রাকআত পড়তে হয়। এই নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। সুরা ফাতিহার পর যে কোন সুরা দিয়ে এই নামাজ আদায় করা যায়। রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেন, এই সময়টাতে আসমানের দুয়ার গুলো খুলে দেওয়া হয় এবং যুহর নামাজের পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই এই সময়টাতে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা অধিক। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সালাতুয জাওয়াল নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
0 Comments: