হজ্জের ৫ দিন হাজিদের ধারাবাহিক কাজ ও নিয়ম গুলো কি কি?
হজ্জের ৫ দিন হাজিদের ধারাবাহিক কাজ ও নিয়মঃ
৮ জিলহজ্জ থেকে ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত চলে হজ্জের কার্যক্রম। হজ্জের ৫ দিনের করণীয়গেুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-
৮ জিলহজ্জঃ ধারাবাহিক কাজ ও নিয়ম
ইহরাম বাঁধাঃ মক্কার হারাম শরিফ কিংবা বাসা বা হোটেল থেকে হজ্জের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং জোহরের নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছা।
মিনায় অবস্থানঃ মিনায় ৮ জিলহজ্জ জোহর থেকে ৯ জিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব এবং সেখানে অবস্থান করা সুন্নাত।
৯ জিলহজ্জঃ ধারাবাহিক কাজ ও নিয়ম
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানঃ ৯ জিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে পালিত হয় পবিত্র হজ্জ। ৯ জিলহজ্জ ফজরের পর যদি সম্ভব হয় মিনায় গোসল করে নেয়া অথবা ওজু করে সকাল সকাল আরাফাত ময়দানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং জোহরের আগেই আরাফাতের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হওয়া এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা। আর এটাই হলো হজ্জের অন্যতম রোকন। ৯ জিলহজ্জ সকালে মিনা থেকে রওয়ানা হবার সময় তাকবির বলা-‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজ্জের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা। তাওবা-ইসতেগফার, তাকবির, তাসবিহ, তাহলিল ও রোনাজারিতে আত্মনিয়োগ করা।
সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশা’র নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইক্বামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।
১০ জিলহজ্জঃ ধারাবাহিক কাজ ও নিয়ম
মুজদালিফায় অবস্থানঃ মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে মরুভূমির বালুর ওপর অবস্থান করা। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে কিছু সময় অবস্থান করা এবং সূর্য উঠার আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।পাথর সংগ্রহঃ মিনায় শয়তানকে মারার জন্য মুজদালিফায় অবস্থানের সময় রাতে কিংবা সকালে কংকর সংগ্রহ করা। কংকরগুলো খুব বড় আকারের নয়; কাবলীবুট এর সাইজমতো হলেই হবে। কমপক্ষে ৭০টির মতো পাথর সংগ্রহ করে নিন এবং জমজমের পানিতে এগুলো ধুয়ে ফেলুন।
কংকর নিক্ষেপঃ ১০ই জিলহজ্জ হলো হজ্জের ৩য় দিন তবে পাথর মারার ১ম দিন। এই দিন জোহরের আগেই সরাসরি বড় শয়তানের কাছে এসে ৭টি পাথর মারতে হবে। এই দিন ছোট এবং মেজো শয়তানকে পাথর মারা যাবে না। আপনি যখন জামারার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকবেন তখন তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন।
লাব্বাঈক, আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্দাল হামদা, ওয়ান্ নি-আ মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারীকা লাক
অর্থঃ আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই, নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার, আপনার কোন অংশীদার নেই।
বড় শয়তানকে পাথর মারার আগ পর্যন্ত তালবিয়া চলতে থাকবে। যখনই বড় শয়তানকে পাথর মারার জন্য পাথর হাতে নিবেন তখন আর তালবিয়া পড়া যাবে না। অর্থ্যাৎ তালবিয়া বন্ধ করে দিবেন।
শয়তানকে পাথর মারার সুন্নত তরিকা হলো জামারার কাছে হাতের ডানে বেশীর ভাগ জায়গা রাখতে হবে মিনার দিকে এবং কম অংশ জায়গা রাখতে হবে হাতের বামে অর্থ্যাৎ কিবলার দিকে। বড় শয়তানকে পাথর মারার পর কোন দু’আ মুনজাত করতে হবে না।
আপনি হাতে ৭টি পাথর নিয়ে একটি একটি করে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে প্রতিটি পাথর মারবেন।
মাসআলা জেনে রাখুনঃ পাথর মারার সময় কোন কারণে আপনার হাত থেকে পাথর পড়ে গেলে সেটি আর নিচ থেকে কুড়িয়ে নিবেন না। অন্য কারো কাছ থেকে পাথর ধার নিয়ে জামারাতে পাথর মারবেন।
কুরবানি করাঃ বড় জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করেই মিনায় কুরবানির পশু জবাই করা। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানি সম্পন্ন করবেন, তারা ব্যাংকের লোকদের কাছ থেকে মাথা ন্যাড়া বা হলক করার নিদির্ষ সময় জেনে নেয়া।
মাথা মুন্ডন করাঃ কুরবানির পর পরই মাথা ন্যাড়া করার মাধ্যমে হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল হবে হাজি। মাথা মুন্ডনের মাধ্যমে হাজি ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১ ও ১২ জিলহজ্জঃ কংকর নিক্ষেপ ও তাওয়াফে জিয়ারত
তাওয়াফে জিয়ারতঃ হজ্জের সর্বশেষ রোকন হলো তাওয়াফে জিয়ারত। যা ১১ জিলহজ্জ থেকে ১২ জিলহজ্জ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ১২ জিলহজ্জ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কুরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।
কংকর নিক্ষেপঃ ১১ ও ১২ জিলহজ্জ প্রতিদিন মিনায় অবস্থান করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।
মিনায় রাত যাপন ও ত্যাগঃ ১০ থেকে ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত মিনাতেই রাত যাপন করা এবং ১২ তারিখ সূর্য ডোবার আগেই মিনা ত্যাগ করবেন। যদি যদি কেউ ১২ জিলহজ্জ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে কিংবা থাকার ইচ্ছা করে তবে তাকে ১৩ জিলহজ্জ ৭টি করে আরও ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ জিলহজ্জও মিনায় অবস্থান করেছিলেন।
বিদায়ী তাওয়াফ
সারাবিশ্ব থেকে আগত সব হজ্জ পালনকারীর জন্য নিজ নিজ দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করা আবশ্যক। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ্জ মাসের ১২ তারিখের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে হিসেবে আদায় হয়ে যায়।
দয়াময় আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে হজ্জের ৫দিন উপরোক্ত কাজগুলো যথাযথ ভাবে আদায় করার তওফিক দান করুন, প্রতিটি হাজীর হজ্জ কবুল করে নিন। আমিন।
0 Comments: